গোবর্ধন পূজা 2021: গোবর্ধন পূজা, বিধি, মুহূর্ত ও গুরুত্ব - Govardhan Puja 2021 in Bengali
দীপাবলির উৎসব অনেক জায়গায় 5 দিন ধরে পালিত হয়। এমন পরিস্থিতিতে গোবর্ধন পূজার জন্য দীপাবলির চতুর্থ দিন নির্ধারণ করা হয়েছে। কার্তিক মাসের শুক্লপক্ষের প্রতিপদ তিথিতে পালিত হয় গোবর্ধন পূজা। অনেক জায়গায় এই দিনে অন্নকূট পূজা এবং বলি পূজাও করা হয়। দীপাবলির পরের দিন উদযাপিত হয়, গোবর্ধন পূজার এই উত্সব প্রকৃতি এবং মানব জীবনের মধ্যে একটি প্রত্যক্ষ এবং স্পষ্ট সংযোগ স্থাপন করে।
গোবর্ধন পূজার দিন গরু মাতার পূজা করা হয়। হিন্দু ধর্মে গরুকে মায়ের মর্যাদা দেওয়া হয়েছে এবং গরু সম্পর্কে শাস্ত্রেও উল্লেখ আছে যে, গো মাতা গঙ্গার বিশুদ্ধ জলের মতো পবিত্র ও পাবন। যদিও দীপাবলির পরের দিন গোবর্ধন পূজা উদযাপিত হয়, কিন্তু কখনও কখনও এই দুটি উৎসবের মধ্যে 1 দিনের ব্যবধান থাকে।
গোবর্ধন পুজো শুভ মুহূর্ত 2021
সর্বপ্রথমে জেনে নেওয়া যাক যে এই বছর গোবর্ধন পুজো করার শুভ মুহূর্ত কী।
5 নভেম্বর, 2021 (শুক্রবার)
গোবর্ধন পূজা মুহূর্ত
গোবর্ধন পূজা প্রাতঃকাল মুহূর্ত: 06:35:38 থেকে 08:47:12 পর্যন্ত
সময়:2 ঘন্টা 11 মিনিট
গোবর্ধন পূজা সায়ংকাল মুহূর্ত: 15:21:53 থেকে 17:33:27 পর্যন্ত
অবধি:2 ঘন্টা 11 মিনিট
তথ্য: উপরে দেওয়া মুহুর্ত দিল্লির জন্য বৈধ। আপনি যদি আপনার শহর অনুসারে গোবর্ধন পূজার শুভ সময় জানতে চান তবে এখানে ক্লিক করুন।
গোবর্ধন পূজার গুরুত্ব
গোবর্ধন পর্বত ব্রিজ অঞ্চলে একটি ছোট পাহাড় হিসেবে বিদ্যমান কিন্তু তবুও একে পাহাড়ের রাজা বলা হয়। এর কারণ হল ভগবান শ্রীকৃষ্ণের সময়ের একমাত্র স্থায়ী ও স্থিতিশীল অবশেষ রয়েছে। এছাড়াও গোবর্ধনকে ভগবান শ্রী কৃষ্ণের রূপ হিসাবেও বিবেচনা করা হয় এবং এই রূপে গোবর্ধন পূজার দিন উনার পূজা করা হয়। গর্গ সংহিতায় গোবর্ধনের গুরুত্ব বর্ণনা করা লাইন অনুসারে বলা হয়েছে যে, “গোবর্ধন পাহাড়ের রাজা এবং ভগবান হরির প্রিয়তম। পৃথিবীতে ও স্বর্গে তাঁর মতো তীর্থযাত্রা আর নেই।"
আপনার কুন্ডলীতে কী কোন দোষ আছে? জানার জন্য এক্ষণি কিনুন এস্ট্রসেজ বৃহৎ কুন্ডলী
গোবর্ধন পুজোর বিধি
আসুন জেনে নিই গোবর্ধন পুজোর সঠিক পদ্ধতি কী, যা অবলম্বন করে আপনিও এই দিনটির পূর্ণ সুবিধা নিতে পারেন।
- সর্বপ্রথম এবং গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল গোবর্ধন পূজা সকালে বা সন্ধ্যার সময় করা হয়।
- এই দিন গোবর দিয়ে গোবর্ধন তৈরি করে উনাকে ফুল দিয়ে সাজানো হয়।
- পূজায় গোবর্ধনে ধূপ, প্রদীপ, নৈবেদ্য, ফল, জল ইত্যাদি অর্পিত করুন।
- এ ছাড়া এই দিনে গরু, ষাঁড় ও কৃষিকাজে ব্যবহৃত পশুদেরও পূজার বিধান বানানো হয়েছে।
- এই দিনে গোবর্ধন কে গোবর দিয়ে শুয়ে থাকা পুরুষের আকারে তৈরি করা হয়। তার নাভির জায়গায় মাটির প্রদীপ রাখা হয়। পূজার সময় এই প্রদীপে দই, দুধ, গঙ্গাজল, মধু, বাতাসা ইত্যাদি ঢেলে দেওয়া হয় এবং পূজার পর তা প্রসাদ আকারে সকল মানুষের মধ্যে বিতরণ করা হয়।
- পূজা করার পর গোবর্ধন কে সাতবার পরিক্রম করা হয় এবং এই সময় গোবর্ধনের জয় বলা হয়।
- পরিক্রম করার সময়, জলে ভরা লোটা/কলসী হাতে নেওয়া হয় এবং তা থেকে জল ফেলতে ফেলতে বপন প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়।
বলা হয়ে থাকে যে গোবর্ধন পূজা করলে ব্যক্তির ঘরে ধনের বৃদ্ধি আর সন্তান প্রাপ্তি হয়। গোবর্ধন পূজার দিনে ভগবান বিশ্বকর্মারও পূজা করা হয়। অনেকে এই দিনে কলকারখানা ও যন্ত্রের পূজাও করেন।
এই দিনে, সন্ধ্যার সময়, দৈত্যরাজ বলির পূজাও করা হয়।
ক্যারিয়ারকে নিয়ে চিন্তিত! এক্ষণি অর্ডার করুন কগ্নিএস্ট্র রিপোর্ট
গোবর্ধন পুজোর ব্রত কথা
বিষ্ণু পুরাণে গোবর্ধন পূজার গুরুত্ব বলা হয়েছে। বলা হয়ে থাকে যে এক সময় দেবরাজ ইন্দ্র নিজের শক্তির প্রতি অভিমানী ছিলেন। তখন ভগবান শ্রীকৃষ্ণ ইন্দ্রদেবের অহংকার দূর করার জন্য একটি লীলা করেন। এক সময় গোকুলের লোকেরা বিভিন্ন রকমের খাবার তৈরি করছিলেন আর খুশি উৎযাপিত করছিলেন। তখন শিশু কৃষ্ণ মা যশোদাকে জিজ্ঞেস করলেন, এসব কি হচ্ছে? লোকেরা কোন উৎসবের জন্য প্রস্তুতি করছেন? তখন মা যশোদা শিশু কৃষ্ণকে উত্তর দেন যে আমরা সবাই ইন্দ্রদেবের পূজা করার জন্য প্রস্তুতি করছি।
এরপর শিশু কৃষ্ণ মা যশোদাকে জিজ্ঞেস করেন যে আমরা ইন্দ্র দেবের পূজা কেন করি? এতে মা যশোদা তাকে বলেন যে ইন্দ্রদেবের কৃপায় ভালো বৃষ্টি হয়, যার ফলে ফসল ভালো হয় এবং আমাদের গরুরা চারা অর্থাৎ খাদ্য/ভোজন পায়। মা যশোদার এই কথা শুনে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ তৎক্ষণাৎ বললেন, যদি এমন হয়, তাহলে আমাদের গোবর্ধন পর্বতের পূজা করা উচিত কারণ, আমাদের গরু গোবর্ধন পর্বত থেকে চারা খাই যারফলে তাদের পেট ভরে এবং গোবর্ধন পর্বতে লাগানো চারা, গাছের কারণে বৃষ্টি হয়ে থাকে।
তারপর আর কি, শ্রীকৃষ্ণের এই কথা শুনে সবাই গোবর্ধন পর্বতের পূজা করতে লাগলো। যা দেখে ভগবান ইন্দ্র খুব ক্রুদ্ধ হন এবং উনি এটির প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য গোকুলে মুষলধারে বৃষ্টি শুরু করে দেন। ভগবান শ্রীকৃষ্ণ গোকুলের বাসিন্দাদের এবং তাদের পশু-পাখিদের প্রবল বৃষ্টির থেকে বাঁচানোর জন্য তাঁর গোবর্ধন পর্বত কনিষ্ঠ আঙুলে তুলে নেন এবং সমস্ত গ্রামবাসীকে পাহাড় থেকে নেমে যেতে বলেন।
এই দেখে ভগবান ইন্দ্র আরও ক্রুদ্ধ হয়ে যান এবং তিনি বৃষ্টিকে আরও তীব্র/প্রবল করে দেন। এই বৃষ্টি 7 দিন ধরে চলেছিল কিন্তু তাতে গোকুল বাসিন্দাদের কোন ক্ষতি হয়নি। যখন ভগবান ইন্দ্র এটি জানতে পারলেন যে তাঁর সাথে যুদ্ধরত এই শিশুটি ভগবান শ্রীকৃষ্ণ ছাড়া আর কেউ নয়, তখন তিনি তাঁর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করলেন এবং তাঁকে পূজা করে উনাকে ভোগও চড়ান। বলা হয়ে থাকে যে এই ঘটনার পর থেকেই গোবর্ধন পর্বত পূজার প্রথা শুরু হয় ।
- গোবর্ধন পর্বত উত্তর প্রদেশের মথুরা জেলায় অবস্থিত। গোবর্ধন পূজার দিন এখানে সারা বিশ্ব থেকে লাখ লাখ ভক্ত এখানে সমবেত হন এবং গোবর্ধন পর্বত পরিক্রম করেন। গোবর্ধন পূজার দিন গোবর্ধন পরিক্রমার বিশেষ তাৎপর্য বলা হয়েছে।
জীবনে চলা সমস্যা! সমাধান জানার জন্য প্রশ্ন জিজ্ঞেস করুন
নতুন বছরের তারিখ এবং এই দিনটির গুরুত্ব
গুজরাতি সম্প্রদায়ের লোকেরাও তাদের নিজস্ব নতুন বছর উদযাপন করে। কার্তিক মাসের শুক্লপক্ষের প্রতিপদা তিথি থেকে গুজরাতিদের এই নতুন বছর বা নববর্ষ শুরু হয়। গুজরাতিদের এই নতুন বছর শুরু হয় অন্নকূট পুজোর দিন। এই বছরও গুজরাতি নববর্ষ শুরু হচ্ছে 5 নভেম্বর 2021 শুক্রবারের দিন থেকে। এই দিনে গুজরাতি সম্প্রদায়ের লোকেরা দেবী লক্ষ্মীর পূজা-অর্চনা করে, যা অনেক জায়গায় চোপড়া পুজন নামেও পরিচিত।
গুজরাতি নব বর্ষ 5 নভেম্বর 2021, দিন- শুক্রবার
প্রতিপদা তিথি প্রারম্ভ4 নভেম্বর 2021 র রাত 02 বেজে 48 মিনিট থেকে
প্রতিপদা তিথি সমাপ্ত 5 নভেম্বর 2021 র রাত 11 বেজে 17 মিনিট পর্যন্ত
গুজরাতি নব বর্ষের গুরুত্ব আর এই দিনটি কীভাবে মানানো হয়?
গুজরাতি সম্প্রদায়ের মানুষেরা গুজরাতি নববর্ষকে সবচেয়ে বড় উৎসব হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এই দিনে গুজরাতি লোকেরা নতুন পোশাক পরে, মন্দিরে প্রার্থনা পূজা-পাঠ করে এবং তাদের বন্ধুবান্ধব এবং আত্মীয়দের সাথে দিনটি উদযাপন করে। দীপাবলির মতো, এই দিনেও ঘর সাজানো হয় এবং আতশবাজি তৈরি করা হয়। এছাড়াও এই দিনে বাড়িতে সুস্বাদু মিষ্টি তৈরি করা হয়, যা লোকেরা তাদের পরিবারের সদস্যদের সাথে একসাথে মিলে খায় এবং এই দিনটি পূর্ণ উৎসাহের সাথে উদযাপন করে।
হিন্দু ক্যালেন্ডার অনুসারে, কার্তিক মাসের শুক্লপক্ষের প্রতিপদ তিথি গুজরাতি নব বর্ষের প্রতীক হয়। এছাড়াও, গুজরাতে কার্তিক মাস বছরের প্রথম মাস হয়ে থাকে এবং এই দিনে গুজরাতি নববর্ষের প্রথম দিন হয়। এই কারণে এই দিনটিকে আর্থিক নববর্ষের সূচনা হিসাবেও বিবেচনা করা হয়।
গোবর্ধন পূজোতে আয়োজন
গোবর্ধন পূজা উপলক্ষে সারাদেশের মন্দিরে ধর্মীয় অনুষ্ঠান ও অন্নকূট অর্থাৎ ভান্ডারা/খাবার বিতরনের আয়োজন করা হয়। এদিন পূজার পর প্রসাদ আকারে মানুষের মধ্যে খাবার বিতরণ করা হয়।
গোবর্ধন পুজোর দিন অন্নকূট উৎসব
সহজ কথায় অন্নকূট মানে বিভিন্ন ধরনের অন্ন, যা এই দিন ভগবান শ্রীকৃষ্ণকে ভোগ হিসেবে নিবেদন করা হয়। এই দিনে অনেক জায়গায় পুরি ও বাজরার খিচুড়িও তৈরি করা হয়। অন্নকূট ছাড়াও, দুধ দিয়ে তৈরি মিষ্টিও ভগবান শ্রীকৃষ্ণকে নিবেদন করা হয় এবং পূজার পর প্রসাদ হিসাবে মানুষের মধ্যে তা বিতরণও করা হয়।
সন্তান প্রাপ্তির জন্য গোবর্ধন পূজা
গোবর্ধন পূজার গুরুত্ব সন্তান প্রাপ্তির জন্য বেশি বলা হয়ে থাকে। যদি সন্তান লাভের জন্য গোবর্ধন পুজো করতেই হয়, তবে এই দিনে প্রথমে দুধ, দই, চিনি, মধু মিশিয়ে পঞ্চামৃত তৈরি করুন। এর পরে অবশ্যই এতে গঙ্গাজল এবং তুলসী যোগ করুন। এই প্রস্তুত পঞ্চামৃতটি একটি শঙ্খের মধ্যে ভরে ভগবান শ্রীকৃষ্ণকে নিবেদন করুন। পূজার পর এই পঞ্চামৃতটি নিজে প্রসাদ হিসেবে গ্রহণ করুন।
আর্থিক সম্পন্নতার জন্য কীভাবে করবেন গোবর্ধন পূজা?
এছাড়া যাদের জীবনে আর্থিক সমৃদ্ধি এবং সুখ-সমৃদ্ধির জন্য গোবর্ধন পূজা করতে হয়, তাদের প্রথমে এই দিনে ঘুম থেকে উঠে গরুকে স্নান করিয়ে তাকে তিলক লাগানোর বিধি বলা হয়ে থাকে। তারপরে গরুকে চারা খাইয়ে সাতবার পরিক্রম করুন।
সমস্ত জ্যোতিষীয় সমাধানের জন্য ক্লিক করুন: এস্ট্রসেজ অনলাইন শপিং
আমরা আশা করি যে আপনার অবশ্যই আমাদের এই নিবন্ধটি পছন্দ হয়েছে। যদি পছন্দ হয়ে থাকে তাহলে, আপনি অবশ্যই এই নিবন্ধটি আপনার অন্যান্য শুভাকাঙ্ক্ষীদের সাথে শেয়ার করুন। ধন্যবাদ!